গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের ৩টি সংগঠনকে 'শান্তি সমাবেশ' ও বিএনপিকে মোট ২৩ শর্তে 'মহাসমাবেশ' করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে, এসব শর্তের ১১টিই মানেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা।
প্রথমত গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দলটির নেতাকর্মীরা সকাল থেকে আসা শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর আগেই বন্ধ হয়ে যায় নয়াপল্টন দিয়ে চলাচলরত সব ধরনের যান।
এছাড়া ডিএমপির ২৩ শর্তের ৩ নম্বরে বলা হয়েছে, অনুমোদিত স্থানেই (পুলিশ হাসপাতাল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের মধ্যবর্তী স্থান) মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। মাইকের ব্যবহার ও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে। সেখানে দলীয় কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন দেখা যায়।
অপরদিকে ডিএমপির দেয়া ৪নং শর্তে বলা ছিল, কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। কিন্তু বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে সমাবেশ কাকরাইল মোড় ও নাইটিঙ্গেল মোড় ছড়িয়ে যায়। দুই প্রান্তে দেখা যায়নি পুলিশের কোনো ব্যারিকেড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতিও সেভাবে লক্ষ করা যায়নি। ৫নং শর্তে নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগের কথা বলা হয়। তবে, সেটাও পর্যাপ্ত সংখ্যক দেখা যায়নি। দলটির কিছু নেতাকর্মীকে সমাবেশে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে দেখা গেছে।
৬নং শর্তে ছিল, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেটা পুরো এলাকায় সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি। ৭নং শর্তে ছিল, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং করতে হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের চেকিং করার জন্য কোনো মেটাল ডিটেক্টর রাখা হয়নি।
ডিএমপির ৮নং শর্তে বলা হয়েছে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু সেখানে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা যায়নি। ৯নং শর্তে বলা হয়েছে, শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে, অনুমোদিত স্থানের বাইরেও মাইকের ব্যবহার দেখা গেছে।
১৪নং শর্তে ছিল, মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। তবে, সকাল থেকেই দলে দলে মিছিল আর স্লোগানে নেতাকর্মীদের আসতে দেখা যায়। ডিএমপির ১৫নং শর্তে বলা হয়েছে, অনুমোদিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শেষ করেন প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বক্তব্য শুরু করেন নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর।
অপরদিকে ডিএমপির ১৬ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু বিএনপি সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। ফলে, বেলা ১১টার পর ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়গামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার পর কাকরাইল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২০নং শর্তে বলা ছিল, কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। তবে, মহাসমাবেশে ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি, ক্রিকেট স্ট্যান্ড, রড ও বাঁশ বহন করতে দেখা যায় দলীয় নেতাকর্মীদের।
তবে এসব বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতাই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য দিতে রাজি হননি।